নিজস্ব প্রতিনিধি, প্রিয়া চৌধুরী
মান্ডা ৭২ নং ওয়ার্ড কদম আলী ঝিলপাড়—এক সময় যেখানে ছিল সবুজ ধানক্ষেত, কৃষকের ঘাম ও শ্রমে ভরপুর চাষাবাদের জমি। আজ সেই জমি রূপ নিয়েছে ক্ষমতাধর ভূমিদস্যুদের শিকারভূমিতে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক যুবলীগের সভাপতি স্বপন হাসান ও তার সহযোগী বাচ্চু নেতৃত্বে এক সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে জমি দখলের ছক কষে আসছিল। অবশেষে তারা অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু ভরাট শুরু করে কৃষিজমি ধ্বংস ও দখলের নগ্ন মহোৎসব।
এই প্রক্রিয়ায় শতাধিক কৃষক পরিবার মুহূর্তেই বিপর্যস্ত। যাদের একমাত্র জীবিকা চাষাবাদ, তাদের জমিই আজ ছিনিয়ে নিচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। কৃষকরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে, করছে গনমিছিল, এবং মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ। তাদের কণ্ঠে একটাই স্লোগান- “কৃষক বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ কিন্তু তাদের এই প্রাণের আকুতি প্রশাসনের কানে পৌঁছায়নি, বরং প্রশাসনের নীরবতা আরও সন্দেহজনকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক আশ্রয়দাতাদের ছত্রছায়ায় হাসান বাচ্চু-স্বপন চক্র বছরের পর বছর অবৈধ দখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ কৃষক যখন জমি রক্ষার লড়াইয়ে রাস্তায়, তখন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন- মুগদা থানা থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত- চরম উদাসীন। তাদের নিষ্ক্রিয়তা জনমনে ধারণা তৈরি করেছে যে, রাষ্ট্রযন্ত্রও আসলে দখলদারদের স্বার্থ রক্ষায় নীরব সহযোগী।
এ সময় কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মুগদা-মান্ডা ৭১ ও ৭২ নং ওয়ার্ড বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। কৃষকদের আন্দোলনে বিরোধী শক্তির এই সংহতি আন্দোলনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। তবে জনমনে প্রশ্ন- কৃষকের এই বিপন্ন অবস্থায় শাসকদল কোথায়? তাদের দায়িত্ব কি কেবল দখলদারদের রক্ষা করা?
কৃষিজমি বিনাশ মানে কেবল একটি গ্রামীণ সংকট নয়, এটি জাতীয় সংকট। খাদ্যনিরাপত্তা আজ ঝুঁকির মুখে। কৃষকের বুক চেপে বসা ড্রেজারের বালু আসলে গোটা জাতির ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করছে। উন্নয়ন আর আধুনিকায়নের নামে কৃষিজমি গিলে খাওয়ার এই প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশ অচিরেই কৃষকহীন ও খাদ্যনির্ভর দাসপ্রজায় পরিণত হবে।