নিজস্ব প্রতিবেদক
মুগদা থানা এলাকার ভাড়া বাসায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার সকালে উদ্ধার হয় এক মন্থর করুণ দৃশ্য—আড়াই মাসের গর্ভধারণে থাকা আফরিন সুলতানা (দিবা) ঝুলন্ত অবস্থায়। ঘটনাস্থলেই উপস্থিত সাধারণ মানুষ ও মুগদা থানার অফিসাররা লাশের পা দুটো খাটের উপর ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এটি কোনো আত্মহত্যা নয়- বরং পরিকল্পিত হত্যার পর মিথ্যা ছদ্মবেশে আত্মহত্যার চিত্র অঙ্কিত করার টনক নেমে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, নিহত দিবার স্বামী সাইফুল ইসলাম (৩৫) দীর্ঘদিন নেশাসূচক আচরণ ও পরকীয়া জড়িত বিবাহহীন সম্পর্ক নিয়ে এলাকায় কুখ্যাত। তিনি দাবী করে থাকতেন নিজেকে বিএনপির কর্মী ও পুরানো ছাত্রদল নেতা আল মামুন পান্নার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত- asserting political cover- যার আড়ালে সে মাদক ব্যবসা, ডাকাতি ও চুরি-ছিনতাইয়ের মতো মামলা ও অভিযোগে জড়িত। এলাকাবাসী বলছে, সাইফুল তার রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ব্ল্যাকমার্কেট ও মাদক চক্রকে রক্ষাবলয় দিয়েছে এবং যারা মুখ খুলে বলেন তাদের হুমকি দিয়ে দমন করে আসছে।
পরিবারে ভালোবেসে বিয়ে হওয়া (২০১৬) এই দম্পতির বিবাহজীবন বরাবরের মতোই উত্তেজনাপূর্ণ ও বিবাদের ছায়ায় ভরা ছিল বলে জানা যায়। গত কয়েক বছর ধরে তাদের দাম্পত্যে পারস্পরিক অভিযোগ-অভিযোগিতার দৃশ্য ছিল নিয়মিত। নিহত দিবা তার পরিবারের কাছে অনেকটা ভয়ে কখনও-full disclosure করতে পারতেন না- এমনটাই এলাকাবাসীর বিবরণ। ঘটনার দিনে, স্থানীয়রা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে দেখেন ঝুলন্ত লাশ, পাশে মেয়ের খেলনা, ভাঙা পা- যা সাধারণ আত্মহত্যার চিত্র নয় বলে স্থানে উপস্থিতদের যুক্তিযুক্ত সন্দেহ।
পুলিশ তল্লাশি করে দেশীয় অস্ত্র, পিস্তল এবং মাদক উদ্ধার করে- এগুলো ঘটনাকে আরও গভীরে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তদন্তে উঠে এসেছে, সাইফুল তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত; গত ৫ আগস্ট মুগদা থানায় হামলা ও মোটরসাইকেল ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং এক ধর্ষণ মামলাও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবী করছেন। অভিযোগ রয়েছে যে সাইফুল কখনো নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে সহিংসতা চালিয়ে আসে, ও গণমানুষকে ধামাচাপা দিতে শাসন-ভীতি ধরণ করে।
এলাকাবাসী এখন বিরাজমান ক্রুদ্ধ অবস্থা থেকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছে- তারা চান মাদকপণ্যের কালো বাজারের গডফাদার এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে অপকর্ম চালানোদের আইনের আওতায় আনা হোক। বিবিকরণে তারা বলছেন, “যারা রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে লিপ্ত, তাদের বহিষ্কার ও শাস্তি না হলে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও নিরাপদ সমাজ ফিরবে না।”
এদিকে নিহত দিবার পরিবারের কাছে বিচার ও নিরাপত্তার প্রশ্ন সবচেয়ে প্রাথমিক। মুগদা থানায় ঘটনার নথি থাকায় পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বললেই সকল শঙ্কা কাটবে না- জনমনে এখন সন্দেহ ও আস্থা-হীনতার ঢেউ বিরাজমান। শহরের প্রতিটি কোণায় যখন মাদক, অপরাধ ও রাজনৈতিক ছদ্মছায়ার সাঙ্গোপাঙ্গো দেখা যায়, তখন এক গর্ভবতী মায়ের নীরব মৃত্যু কেবল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি সামাজিক ব্যর্থতার এক মর্মন্তুদ ইঙ্গিত।