মোঃ বাবুল আক্তার
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় অধ্যায়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা শুধু একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতাই অর্জন করিনি, বরং বহু দিক থেকে জাতি হিসেবে নতুন এক পরিচয়, সম্ভাবনা ও দায়িত্ব পেয়েছি। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে আমরা পেয়েছি আমাদের নিজস্ব দেশ – বাংলাদেশ। এখন আমাদের রয়েছে নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সংগীত, সংবিধান ও জাতীয় সীমানা। মাতৃভাষার মর্যাদা ও পরিচয়,পাকিস্তান আমলে বাংলা ভাষার ওপর যে দমননীতি চলেছিল, তার অবসান ঘটেছে। স্বাধীনতার মাধ্যমে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বাংলা ভাষার মর্যাদা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বেড়েছে।
আত্মপরিচয় ও জাতীয় গর্ব আমরা এখন পরিচয় দিতে পারি: “আমি বাংলাদেশি”। এটা আমাদের আত্মমর্যাদা ও গর্বের জায়গা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জাতীয় ঐক্য ও চেতনার মূল ভিত্তি। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ, পাকিস্তানের অধীনে আমরা ছিলাম একনায়কতান্ত্রিক শাসনের শিকার। স্বাধীনতার মাধ্যমে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ তৈরি হয়েছে। জনগণের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা ও আন্দোলন গড়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খুলে যায়,
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। পোশাক শিল্প, রেমিট্যান্স, কৃষি, প্রযুক্তি—সব খাতে অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতার জন্যই। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অংশগ্রহণ, স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘ, ওআইসি, সার্কসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য। বিশ্ব মঞ্চে আজ বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর আছে, নীতিমালা প্রভাব ফেলছে। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিকাশ, স্বাধীনতার ফলে আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র—সবই মুক্তভাবে বিকশিত হতে পেরেছে। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাহিত্য ও চর্চা জাতির চেতনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একাত্তরের স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে:
একটি স্বাধীন রাষ্ট্র
জাতিস্বত্বার স্বীকৃতি
ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা
গণতন্ত্র ও অধিকার চর্চার সুযোগ
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মান
আত্মপরিচয়ের শক্ত ভিত
তবে স্বাধীনতার স্বপ্ন পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত করতে হলে, আমাদের সামনে এখনো অনেক কাজ বাকি। দুর্নীতি, বৈষম্য, দারিদ্র্য ও অরাজকতা রোধ করে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনই হতে পারে আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।