মো বাবুল আক্তার
এমবিবিএস (MBBS) ডিগ্রি অর্জন করা একজন শিক্ষার্থীর জীবনে একটি বড় অর্জন হলেও, এর পেছনের কষ্ট, ত্যাগ ও সংগ্রাম অনেক গভীর এবং বাস্তব। একজন এমবিবিএস ডাক্তারের কষ্টকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা যায় — পড়াশোনার সময়, ইন্টার্নশিপ, পেশাজীবন, সামাজিক ও মানসিক চাপ ইত্যাদি। পড়াশোনার সময়ের কষ্ট, প্রবেশিকা যুদ্ধ, মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার জন্য কঠোর প্রতিযোগিতা পেরোতে হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে খুব অল্পসংখ্যক সুযোগ পায়। চরম পরিশ্রম,
এমবিবিএস কোর্স ৫ বছর ব্যাপী। এই সময়ে পড়াশোনার চাপ অত্যন্ত বেশি থাকে। অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, সার্জারি, মেডিসিন ইত্যাদি বিষয় অত্যন্ত জটিল। নিদ্রাহীন রাত, পরীক্ষার সময় তো বটেই, সারা বছরই পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া কঠিন।
ব্যক্তিগত জবনে সময়ের অভাব, পরিবার, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইন্টার্নশিপের সময়,বিনা বিরতিতে কাজ,২৪-৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা ডিউটি করতে হয়।নিম্ন বেতন, অধিকাংশ জায়গায় ইন্টার্নশিপের সময় বেতন হয় খুবই সামান্য, অথচ কাজের পরিমাণ অনেক বেশি। শারিরীক ও মানসিক চাপ, রোগীর মৃত্যু, ভুল চিকিৎসার ভয়, সিনিয়রদের চাপে কাজ করা — এসবই মানসিক ক্লান্তি তৈরি করে। পেশাজীবনের কষ্ট, রাত-দিন ডিউটি,
সরকারি হাসপাতালে কিংবা প্রাইভেট,প্র্যাকটিসে—চিকিৎসকরা প্রায়ই রাতে ঘুমাতে পারেন না। দায়িত্বের ভার,একজন রোগীর জীবন নির্ভর করে তাঁর সিদ্ধান্তের উপর। তাই প্রতিটি সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চাপের মধ্যে নিতে হয়। রোগী ও আত্মীয়ের আচরণ, অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি বা চিকিৎসা ব্যর্থ হলে ডাক্তারকে শারীরিক বা মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়।
সামাজিক ও পারিবারিক কষ্ট, ব্যক্তিগত সময়ের অভাব, পরিবারকে সময় দেওয়া কঠিন, যার ফলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থনৈতিক চাপ,অনেকে মনে করেন, ডাক্তার মানেই ধনী — কিন্তু এই অবস্থায় পৌঁছাতে অনেক বছর লেগে যায় এবং অনেকেই শুরুতে আর্থিক দিক থেকে কষ্টে থাকেন। চিরস্থায়ী চাপ ও দায়িত্ব, ডাক্তারদের কখনও ভুল করার সুযোগ থাকে না। এটা একটা চিরস্থায়ী মানসিক চাপ। মানুষ সব সময় তাদের কাছে সমাধান চায় — তারা নিজে অসুস্থ হলেও রোগী দেখতে হয়।
একজন এমবিবিএস ডাক্তার শুধুমাত্র একটি ডিগ্রি অর্জন করেন না, বরং ত্যাগ, শ্রম, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মবলিদানের মাধ্যমে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের কষ্ট অনেক, কিন্তু সমাজের সেবা করার ইচ্ছা ও রোগীর সুস্থতাই তাঁদের মূল প্রাপ্তি।