অবশেষে বায়ান্নর আলো’র প্রতিনিধি মিফতাহুল ইসলামকে মারপিট, জোরপুর্বক চাবি কেড়ে নিয়ে প্রেস ক্লাবের তালা খুলে সাংবাদিক ছাড়াই সংবাদ সম্মেলনের ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। সোমবার সাংবাদিক মিফতাহুল ইসলাম বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় মামলা রুজু করেন।
পুলিশ, এজাহার, ঘটনাসুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভার নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে পৌরবাসীর ব্যানারে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি’র পীরগঞ্জ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হাবিবুর রহমান পল্টন। তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা না করে দিনভর মাইকে প্রচার করেন। এতে প্রতিষ্ঠান বির্তকিত হতে পারে এমন আশংকায় কর্তৃপক্ষ সোমবার রাতে জরুরী বৈঠকে বসে। বৈঠকে হাবিবুর রহমান পল্টনকে ডেকে প্রেক্ষাপট উপস্থাপনের পর প্রেস ক্লাব হলরুম ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়।
পাশাপাশি মাইকে প্রচারে মব সৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও আয়োজকদের জানানো হয়। বৈঠক শেষে আয়োজকরা পাশের খালি স্থানে (আওয়ামী লীগ কার্যালয়) সংবাদ সন্মেলনের সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ওই স্থানে ময়লা ফেলে পৌরসভা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আয়োজকরা ময়লার গাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে ব্যারিকেড দেন। দুপুর ১২টার পর তারা প্রেস ক্লাবের বাউন্ডারি’র ভিতরে প্রবেশ করে মব সৃষ্টি করে। সে সময় মুষলধারে বৃষ্টি সহ বৈরী আবহাওয়ায় প্রেস ক্লাব বন্ধ ছিল। তারা প্রেস ক্লাবের হলরুমের তালা ভেংগে ভিতরে ঢোকার উদ্যোগ নেয় এবং সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, হুমকি-ধামকি দিতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে সেখানে উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিকরা কেউ তালা খুলতে সাহস পায়নি। প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে সড়কে ব্যারিকেড থাকে। এক সময় পুলিশের উপস্থিতি ঘটলেও সড়কের ব্যারিকেড সহ প্রেস ক্লাব থেকে সড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় হাবিবুর রহমান পল্টন। বেলা ২ টার দিকে প্রেস ক্লাবের সম্মুখ সড়কের বিপরীতে সিঙ্গার শো-রুমের সামনে দাড়িয়ে থাকা বায়ান্নর আলোর সাংবাদিক মিফতাহুল ইসলামকে জনৈক একজন দেখিয়ে দেয়। হাবিবুর রহমান পল্টন সহ তার গংরা মিফতাহুল ইসলামকে মারধর করে প্রেসক্লাবের চাবি সহ তার পত্রিকার আই.ডি কার্ড কেড়ে নেয়।
মিফতাহুলকে টেনে হিচড়ে প্রেস ক্লাবে নিয়ে আসেন এবং কেড়ে নেয়া চাবি দিয়ে প্রেসক্লাব খোলেন। জোরপুর্বক মিফতাহুল সহ অনেক সাংবাদিককে সংবাদ সম্মেলনে বসানো হয়। এক সময়ে মিফতাহুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। সহকর্মীরা তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেন। সাংবাদিক ছাড়াই নিজেরা সংবাদ সম্মেলন করেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ব্যারিকেড সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রেস ক্লাব ত্যাগের সময় হাবিবুর রহমান পল্টন প্রেসক্লাবের আহবায়ক ইত্তেফাকের শাহ মো: সাদা মিয়াকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে আধা ঘন্টার মধ্য মিফতাহুলকে হাসপাতাল থেকে আনতে বলেন।
এ সময় কালের কন্ঠের প্রতিনিধি হাবিব সহ মুঠোফোনে আরও কয়েকজনকে হুমকি দিয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা ছিলাম, আমার বাড়ি উপজেলা সদরের মধ্যখানে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব সাংবাদিককে দেখে নেবো”। রাতেই জরুরি বৈঠকে বসে প্রেসক্লাবের সদস্যরা। তারা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। পরদিন বুধবার পীরগঞ্জ প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব পীরগঞ্জ উপজেলা শাখা যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন করে। এতে সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ স্বতস্ফুত অংশ নেয়। মিফতাহুল ইসলাম ন্যায় বিচারে অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হাবিবুর রহমান পল্টন নিজে, হাবিবুর রহমান পল্টনের গুটি কয়েক সমর্থক সহ বেশ কয়েকটি ফেক আইডি থেকে সাংবাদিকদের প্রাণ নাশের হুমকি-ধামকি, সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রোপাগান্ডা এবং প্রেস ক্লাব দখল সহ নানা ধরনের মব সৃষ্টির হুমকি আসতে থাকে।
শুক্রবার সকালে মিফতাহুল ইসলাম উপজেলা সদরের প্রজাপাড়ার বিএনপি’র সাবেক সেক্রেটারী আব্দুল মান্নান বাচ্চু মন্ডলের ছেলে হাবিবুর রহমান পল্টনকে (৪৮) প্রধান, পীরগঞ্জ মৌজার মৃত আনিছার রহমান মিয়ার ছেলে মাজেদুল ইসলাম (৪২) ও প্রজাপাড়া মৌজার মৃত মোজদার রহমানের ছেলে আবু নোমান মোঃ মুশফিকুর রহমান (৪০) সহ অজ্ঞাত নামা ২০/৩০ জনকে সহযোগি আসামী করে অভিযোগ দাখিল করে।
ওসি শফিকুল ইসলাম জানান-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, মামলা রুজু হয়েছে, গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান চলছে, অপরাধিরা যত শক্তিশালি হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রেসক্লাবের নিরাপত্তায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ইউএনও খাদিজা বেগম জানান, সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের তৃতীয় চোখ, গণমাধ্যমকর্মীরা সমাজের দর্পণ, প্রেসক্লাব রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের, প্রেসক্লাবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনাকে প্রসাশন প্রশ্রয় দিবে না। এদিকে বায়ান্নর আলোর প্রতিনিধিকে মারধর, জোরপুর্বক আই.ডি কার্ড সহ প্রেসক্লাবের চাবি কেড়ে নেয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিবৃতি দিয়েছেন। তারা হলেন-রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে)-এর পক্ষে- সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর সিটি প্রেস ক্লাবের পক্ষে- সভাপতি স্বপন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির মানিক, বায়ান্নর আলোর প্রকাশক আব্দুস সোবহান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাজিদুল ইসলাম লাল, বায়ন্নার আলো পরিবার, পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পক্ষে-আহবায়ক শাহ মো: সাদা মিয়া,
যুগ্ন আহবায়ক হাসান আলী প্রধান, পীরগাছা প্রেস ক্লাবের পক্ষে- সভাপতি রবিউল আলম বিপ্লব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ। বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব রংপুুরের উপদেষ্ঠা ও বজ্রকথা’র সম্পাদক ও প্রকাশক সুলতান আহমেদ সোনা, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার পক্ষে-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রায়হান বিপ্লব।