রতন কুমার ঘোষ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পানের দাম কম হওয়ায় পান চাষীদের বেহাল দশা পরিলক্ষিত হয়েছে। পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। ভেঙে ফেলছেন পানের বরজ।
পান চাষীদের থেকে জানা যায়, প্রতি বিঘা নতুন পান বরজে খরচ হয় ৩/৪ লাখ টাকা। যেখানে পান বিক্রি করে আসছে ১ লাখেরও কম।পান বরজের সরঞ্জামের দাম বেড়েছে পূর্বেছে তিন গুণ। পূর্বে যে শ্রমিকের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বর্তমানে তা হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। তাই অনেকেই পান ররজ মেরামত না করে রেখে দিয়েছেন। দাম কম হওয়ায় কেউ আবার বড়জের পান ভাঙছেন না।ঋণের দায়ে জর্জরিত কেউ কেউ বরজ ভেঙে অন্য চাষাবাদ করার মনস্থির করেছেন। বরজের ওপর ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে এলাকা ছেড়েছেন।
উপজেলার বৃহত্তম হাট জগশ্বর পান হাটে গিয়ে দেখা যায়, ৫০-২০০ টাকা বিড়ার পান বিক্রি হচ্ছে ৫-৩০ টাকায়।খুব ভালো মানের পান বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বিড়া।
পান বিক্রি করতে আসা পান চাষী মো: রফি জানান, প্রতি বিড়া ৭ টাকায় বিক্রি করলাম। যা গত বছর করেছি ৯০-১০০ টাকায়। পান ভাঙ্গা আর যাতায়াত খরচই উঠলো না।এই ব্যবসা আর হবে না। প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে আমরা এই ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু জিনিসপত্রের পর্যাপ্ত দাম আর পানের চাহিদা না থাকার কারণেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছি। এমন দাম থাকলে ভবিষ্যতে আর পান চাষের দিকে চাষিরা আগ্রহ দেখাবে বলে মনে হয় না।
পান চাষী তুষার জানান, আমার জীবনে পানের দাম এত কম দেখিনি। আমার ৯০ পিলি পান বরজ ছিল কিন্তু দাম না পেয়ে ভেঙে ফেলা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেক পানচাষি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা এনজিওর থেকে ঋণ নিয়ে পান বরজ করেছিল।সঠিকভাবে কিস্তি দিতে পারছে না তাই তাদের হতে হয়েছে বাড়িছাড়া। সরকারের উচিত আমাদের দিকে সঠিক নজর দেয়া যাতে করে আমরা টিকে থাকতে পারি।
বাহাদুরপুরের পান চাষী ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা জমেলা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন,”৪০ বছরের পুরাতন পান বরজ আমার।না পারছি ভাঙতে, না পারছি রাখতে। পান বাজারে নিলে খরচের টাকাও ফিরে পাচ্ছি না।”
জগশ্বর পানহাটের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানান, এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় পানের দাম অনেক কম। কিন্তু পান বরজের সরঞ্জামের দাম পূর্বের থেকে ৩ গুন বেশি।তাছাড়াও এই বছর পানের উৎপাদন অনেক বেশি। সঠিক দাম না পাওয়ায়
পান চাষীদের মধ্যে হাহাকার লক্ষ্য করছি।অনেক পানচাষী এই আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন। তাই সরকারের উচিত তাদের দিকে নজর দেওয়া।
ভেড়ামারা উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা,ভেড়ামারা উপজেলার মোট ছয়টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ইউনিয়নে বেশি পান চাষ করা হয়। প্রায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়। বিগত বছরগুলোতে পানের দাম বেশি হলেও এ বছরে পানের দাম নেই বললে চলে।বর্তমানে পান চাষীদের দুর্ভোগের কথা শুনেছি। তারা পান চাষ বাদ দিয়ে অন্য চাষাবাদে মনোযোগ দিয়েছে।
বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে পান চাষীদের জন্য কোন প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই